বহু বই পুস্তক পড়িয়াছি। বিভিন্ন সমাজ চিন্তাবিদদের লিটারেচারও দেখিয়াছি। বিভিন্ন চিকিসকের অভিজ্ঞতা হইতে এবং বহু চিন্তার পর এই সিন্ধান্তে উপনীত হইয়াছি যে, বাঙ্গালীর স্বাস্থাহীনতার মূল কারণ দুইটি। যথাঃ- আহারের ব্যতিক্রম ও অসংযম, আবার স্বাস্থ্যান্নতি না হওয়ার কারণও দুইটি। যথাঃ- পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যোপযোগী খাদ্যের অভাব এবং সুচিকিসার ব্যবস্থা না থাকা।

ভাত (স্বাস্থকর খাদ্য)
আমাদের দেশের অধিকাংশ চিকিসা একটি পূর্ণ জীবনের দায়িত্ব। এই দায়িত্ববিহীন চিকিসার পরিণাম কতদূর ক্ষতিকর তাহা আর বুঝাইবার প্রয়োজন নাই। সমাজের চিন্তাবিদরাই সম্যক উপলদ্ধি করিতেছেন। দেশীয় চিকিসার সম্প্রসারণ ও চিকিসকদের মধ্যে যত দিন রোগীর জীবনের দায়িত্বজ্ঞান পূর্ণভাবে আত্মপ্রকাশ না করিবে ততদিন অবহেলিত বাঙ্গালীর জীবনে ও সমাজের উন্নতি সম্পূর্ণ অসম্ভব। পাঠক পাঠিকা মনে রাখিবেন, আহারাদি কেবলমাত্র শরীরের পুষ্টিসাধনের জন্যই। উদর পূর্ণ কিংবা চক্ষু ও জিহ্বার তৃপ্তি মিটাইবার জন্য নহে।

জন্মের পর হইতেই শিশুকে নিয়মিত আহারে অভ্যস্ত করিয়া গড়িয়া তুলিবে। নিয়মিতভাবে প্রত্যহ যথা সময় স্বাস্থ্যোপযোগী আহার করিবে। অক্ষুধায় বা দুষ্ট ক্ষুধায় কখনও আহার করিবে না। 

ফলমূল (স্বাস্থকর খাদ্য)
পূর্ণভোজন অর্থা ভুক্তদ্রব্য সম্যক পরিপাক হইবার পূর্বে কিছুতেই কোন খাদ্য ভক্ষণ করিবে না। কারণ পূর্ণভোজনটি সর্ববিধ রোগের আকর। সর্বদা কিছু ক্ষুধা থাকিতে খাওয়া শেষ করিবে। উদর পূর্ণ করিয়া আহার করিবে না।

কদাচি খাওয়া বেশী হইয়া গেলে পরবর্তী ভোজন সন্ধায় আর খাইবে না।

খাবার খাইতে খুব তাড়াহুড়া করিয়া কখনও আহার করিবে না। ইহাতে যেমন হযমের কাজে ব্যাঘাত জন্মিয়া থাকে তেমনি অনেক সময় মৃত্যুও ঘটিয়া থাকে। খুব ভাল করিয়া চিবাইয়া খাইবে। আল্লাহ্‌ পাক জিহ্বার তলদেশে ২টি ঝরণা দিয়াছেন। চর্বণকালে উহা হইতে নিঃসৃত তরল লালাময় পনি বাহির হইয়া থাকে। ঐ পানি চর্বিত দ্রব্যের সহিত মিশিয়া গেলে খুব ভাল হজম হইয়া থাকে। আবার এত ধীরে ধীরেও আহার করিবে না যাহাতে খাদ্য দ্রব্যাদি বরতনেই শুকাইয়া ঠান্ডা হইয়া যায়।

সর্বদা নিজের হজম শক্তির প্রতি লক্ষ্য রাখিবে। যে পরিমাণ এবং যে সব খাদ্য হজম করা সম্ভব হইবে ঠিক তাহাই ভক্ষণ করিবে। যাহা হজম করা সম্ভব না তাহা হাজার উত্তম উপদেয় হইলেও ভক্ষণ করিবে না এবং যে কোন লোকে সুপারিশ করুক না কেন সর্বদা আত্মরক্ষা অগ্রগণ্য বলিয়া দৃঢ় বিশ্বাস রাখিবে। আহারের মাঝে মাঝে সামান্য পানি পাক করিলে হজম ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। 

সুসিদ্ধ ভাত বাঙ্গালীর একটি চরম খাদ্য। কিন্তু অন্ন ভাল সিদ্ধ না হইলে অতি সহজেই পেটে পীড়া এসে উপস্থিত হয়।

নূতন আউসের ভাত গুরুপাক। দুর্বল ও রোগারোগ্য ব্যক্তির পক্ষে অহিতকর।

নূতন আমন ও বোরো অপেক্ষাকৃত একটু লঘু।

পরিপূর্ণ সিদ্ধ ভাত
সর্বপ্রকার পূরাতন চাউল লঘু পাক। কিন্তু এত পুরাতন হওয়া চাই না যাহা শুকাইয়া সারপদার্থ কিছুই রাখে না। ঢেকি ছাটা চাউল পুষ্টিকর ও বেরিবেরি নাশক। কলে ছাটা চাউল পুষ্টিকর নহে। কারণ কলের ছাটায় চাউলের উপরিভাগের লাল আভাযুক্ত হাল্‌কা কুড়াটা নিক্ষেপিত হইয়া স্বাস্থ্যের অনুপযুক্ত হইয়া থাকে এবং বেরিবেরি রোগ পয়দা হইয়া থাকে। তাই বলিয়া গাঢ় কুড়াযুক্ত চাউলের ভাত খাইবে না। ভাতের মাড় গালিয়া ফেলিবে না। কারণ ইহাতে মাড়ের  সহিত উহার সারাংশ বাহির হইয়া যায়

0 comments:

Post a Comment