দৈনিক
পাচ ওয়াক্ত নামায ফরয। অতএব, সেই
ওয়াক্তগুলি চিনিয়া লওয়া আবশ্যক। পাচ ওয়াক্ত নামযের নাম। ১। ফজর, ২। যোহর, ৩।
আছর, ৪। মাগরিব, ৫। এশা। ফজরে দুই রাকা'আত, যোহরে
চার রাকা'আত, আছরে চার রাক'আত, মাগরিবে
তিন রাক'আত এবং এশায় চারি রাকা'আত; মোট এই ১৭ রাকা'আত
নামায দৈনিক ফরয।
ছোব্হে ছাদেকঃ
১। মাসআলাঃ যখন রাত্র
শেষ হইয়া আসে তখন পূর্বাকশে দৈরর্ঘ্যে অর্থাৎ, উপর
নীচে একটি
লম্বমান সাদা রেখা দেখা যায়। এই রেখা প্রকাশের সময়কে 'ছোব্হে সাদেক' বলে।
ঐ সময় ফজরের নামাযের ওয়াক্ত হয় না। কিছুক্ষণ পরে ঐ সাদা রেখা বিলীন হইয়া আবার অন্ধকার
দেখা যায়। ইহার অল্পক্ষণ পর আকাশের প্রস্থে অর্থাৎ, উত্তর-দক্ষিণে
বিস্তারিত সাদা রং দেখা দেয়। এই সাদা রং প্রকাশের সময় হইতে 'ছোবহে ছাদেক' আরম্ভ হয়। ছোব্হে ছাদেক হইলে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত হইয়াছে বুঝিতে হইবে এবং
সূর্য উদয় না হওয়া প্রর্যন্ত ফজরের ওয়াক্ত থাকিবে। যখন পূর্বাকাশে সূর্যের সামান্য কিনারা দেখা
দেয়, তখন ফজরের ওয়াক্ত শেষ
হইয়া যায়।
কিন্তু (মেয়ে লোকের জন্য) আউয়াল ওয়াক্তে নামায পড়া ভাল।

২। মাসআলাঃ ঠিক
দ্বিপ্রহরের পর যখন সূর্য কিঞ্চিৎমাত্র ঢলিয়া পড়ে তখন যোহরের ওয়াক্ত হয় এবং
প্রত্যেক জিনিসের ছায়া উহার দ্বিগুণ না হওয়া প্রর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত থাকে। কিন্তু ছায়া
সমপরিমাণ হইবার পূর্বে নামায পড়িয়া লওয়া মোস্তাহাব। সকল বস্তুর ছায়াই সকাল বেলায়
পশ্চিম দিকে থাকে এবং অনেক বড় থাকে। ক্রমান্বয়ে ছায়া ছোট হইতে থাকে। এমনকি, ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় সবচেয়ে ছোট হইয়া কিছুক্ষণ
পরে আবার পূর্বদিকে বাড়িতে আরম্ভ করে। যখন ছায়া সবচেয়ে ছোট হয়, তখন ঠিক দ্বিপ্রহরের সময়। এই সময় সবচেয়ে ছোট যে ছায়টুকু থকে
তাহকে 'ছায়া আছলী' বলে। ছায়া আছ্লী যখন বাড়িতে আরম্ভ করে,
তখন যোহরের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়। ছায়া আছ্লী
বাদে ছায়া যখন ঐ বস্তুর সমপরিমাণ হয় তখন পর্যন্ত যোহরের নামায পড়া মোস্তাহাব। ছায়া আছ্লী
বাদে ছায়া দ্বিগুণ হইবার পূর্ব প্রর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত থাকে। যখন দ্বিগুণ হইয়া যায়, তখন আর যোহরের ওয়াক্ত থাকে না, আছরের ওয়াক্ত আসিয়া যায়। ছায়া আছ্লী
বাদে ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আছরের ওয়াক্ত। কিন্তু সূর্যের রং হলদে
হওযার পূর্ব প্রর্যন্ত
মোস্তাহাব ওয়াক্ত; তাহার পর মকরূহ
ওয়াক্ত। অবশ্য যদি কোন কারণবশতঃ ঐ দিনের আছরের নামায পড়া না হইয়া থাকে, তবে ঐ সময়ই পড়িয়া লইবে, নাময ক্বাযা হইতে দিবে না। কিন্তু
আগামীর জন্য সতর্ক হইবে, যাহাতে
পুনঃ ঐরূপ
দেরী না হয়। অবশ্য এই সময়ে ঐ দিনের আছর ব্যতীত ক্বাযা, নফল বা অন্য কোন নামায পড়িলে তাহা জায়েয হইবে না।

৪।
মাসআলাঃ গ্রীস্মকালে (ছায়া সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত) দেরী করিয়া যোহরের নামায পড়া উত্তম।
শীতকালে যোহরের নামায আউয়াল ওয়াক্তে পড়া মোস্তাহা।)
৫। মাসআলাঃ শীত, গ্রীস্ম উভয় কালেই আছরের নামায ছায়া
দ্বিগুণ হওয়ার পরই পড়া ভালঃ কিন্তু যেহেতু আছরের পর অন্য কোন নফল নামায পড়া জায়েয নহে,
কাজেই সামান্য দেরী করিয়াই পড়া উচিত, যাহাতে কিছু নফল পড়া যাইতে পারে। কিন্তু সূর্যের রং হলদে
হওয়ার পূর্বেই এবং রৌদ্রের রং পরিবর্তন হওয়ার পূর্বে আছরের নামায পড়িবে। (রং
পরিবর্তন হইয়া গেলে ওয়াক্ত মকরূহ্ হইবে।) মাগরিবের নামায সূর্য সম্পূর্ণ ডুবিয়া যাওয়া মাএই
পড়া মোস্তাহাব।
৬।
মাসআলাঃ যাহার
তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস আছে, যদি
শেষ রাত্রে উঠার দৃঢ় বিশ্বাস থাকে, তবে
তাহার বেৎর নামায শেষ রাত্রে পড়াই উত্তম। যদি শেষ
রাত্রে ঘুম ভাঙ্গার বিশ্বাস না থাকে, তবে
এশার পর ঘুমাইবার পূর্বে বেৎর পড়িয়া লওয়া উচত।
৭। মাসআলাঃ মেঘের দিনে
সঠিক সময় জানিতে না পারিলে ফজর, যোহর
এবং মাগরিবের নামায
একটু দেরী করিয়া পড়া ভাল (যেন ওয়াক্ত হইবার পূর্বে পড়ার সন্দেহ না হয়।) এবং আছর কিছু
জলদি পড়া ভাল (যাহাতে মকরূহ্ ওয়াক্তে পড়ার সন্দেহ না হয়।)
৮।
মাসআলাঃ সূর্য উদয়, সূর্য অস্ত এবং ঠিক
দ্বিপ্রহর এই তিন সময়ে কোন নামাযই দুরুস্ত নহে, তাহা নফল হউক, ক্বাযা
হউক, তেলাওয়াতের সজ্দা বা জানাযার নামায হউক।
কিন্তু সেই দিনের আছরের নামায না পড়িয়া থাকিলে সূর্য অস্ত যাওয়ার সমযের পড়িয়া লইবে। অনুরূপ
সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় জানাযা হাডির হইলে, কিংবা আয়াতে সজ্দা তেলাওয়ত করিলে জানাযার নামায এবং
তেলাওয়াতের সজ্দা
আদায় করিয়া দিবে। --মারাক্বী
0 comments:
Post a Comment