বিবাহ সকল নারী-পুরুষের উপর ফরজ। জীবনে সকলের একবার হলেও বিবাহ করতে হবে। আর মুসলমানরা সর্বচ্চ চারটি বিবাহ করতে পারে। কোন ব্যক্তির প্রথম স্ত্রী জিবিত থাকলে তার প্রথম স্ত্রীর অনুমতিতে বিবাহ করতে পারবে। নীচে হাদিসের আলোকে বিবাহের মাসাআলা দেওয়া হলঃ-
১।মাসআলাঃ বিবাহ্‌ আল্লাহ্‌ তা'আলারঅতি বড় একটি নেয়ামত। ইহা দ্বারা দ্বীনেরও উপকার হয় এবং দুনিয়ার উপকার হয়। ইহার উপকারিতা এবংসদুদ্দেশ্যাবলী অনেক বেশী। বিবাহ্‌ দ্বারা মানুষ গোনাহ্‌ হইতে রক্ষা পায়,চক্ষু বা দিল এদিক যায় না এবং মনের চাঞ্চল্য দূর হয়।বড় বিষয এই যে, বিবাহে যেমন পার্থিব উপকার হয়, তেমন আখেরাতেরও উপকার হয়। কেননা,(পার্থিব উপকারিতা, ঘর-গৃহস্থালির দুশৃঙ্ক্ষলা ত আছেই,তাছাড়া হাদীস শরীফে আছে,) 'স্বামী-স্ত্রী যে সময়মত গোপন ঘরে বসিয়াপ্রেমালাপ বা হাসি-ঠাট্টা করে তাহার ছওয়াব নফল নামাযের চেয়ে কম নহে। 

২।মাসআলাঃ দুই জনের মুখের দুইটি কথা অর্থাৎ 'ঈজাব' এবং 'কবূলের'দ্বারা নেকাহ্‌র আক্‌দ (বিবাহ-বন্ধন) সম্পাদিত হইয়া যায়।যেমন-যদি দুল্‌হানের পিতা সাক্ষীদের সামনে দুল্‌হাকে লক্ষ্য করিয়া বলেন যে, 'আমি আমার কন্যাকে আপনার নিকট বিবাহদিলাম' এবং দুল্‌হা বলে যে,'আমি কবূল করিলাম'-তবেই নেকাহ্‌র আক্‌দ হইয়া যাইবে এবং দুল্‌হা-দুলহান উভয়েস্বামী স্ত্রী হইয়া যাইবে। 

অবশ্যযদি তাহার একধিককন্যা থাকে, তবে মেয়ের নামওউল্লেখ করিতে হইবে (এবং নেকাহ্‌র আক্‌দের সময় মহরের উল্লেখ করিয়া দেওয়াও উত্তমএবং তৎপূর্বে খোৎবায়ে মাছুরা পড়া এবং পরে খোরমা, মিঠাই ইত্যাদির দ্বারা হাজিরানে মজলিসেরমুখ মিঠা করা মোস্তাহাব।যদিও দুইজন পুরূষ অথবা একজন পুরূষ ও দুইজন স্ত্রীলোকের সামনে 'ঈজাব-কবূল' হইলেই নেকাহ্‌র আক্‌দ হইয়া যায়; তবুও ভাই-বোনদের, পাড়া-প্রতিবেশী,আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবগণেরপ্রকাশ্য সভায় বিবাহ হওয়াই উত্তম।

 ৩।মাসআলাঃ কেহ যদি বলে, 'আপনারঅমূক মেয়ের বিবাহ আমার সহিত দিয়া দেন' এবংতদুত্তরে মেয়ের পিতা বলে, 'আচ্ছাআমি তাহার বিবাহ্‌ আপনার সহিত দিয়া দিলাম', তবে (এইরূপ বলাতেও) বিবাহ্‌ হইয়া যাইবে, প্রার্থী পুনরায় 'আমি কবূল করিলাম' এইকথা না বলিলেও চলিবে।

৪।মাসআলাঃ মেয়ে যদিসামনে উপস্থিত থাকে এবং তাহার দিকে ইশারা করিয়া বলে যে, 'আমার এই মেয়ের বিবাহ আপনার সহিত দিয়া দিলাম' এবং দ্বিতীয পক্ষ অর্থাৎ দুল্‌হা বলে যে, 'আমার এই মেয়ের বিবাহ আপনার সহিত দিলাম' এবং দ্বিতীয় পক্ষ অর্থাৎ দুল্‌হা বলে যে, 'আমি কবূল করিলাম', তবেতাহাতেই বিবাহ দুরূস্ত হইবে, মেয়েরনাম উল্লেখকরার দরকার হইবে না। আর যদি মেয়ে সামনে উপস্থিত না থাকে, তবে মেয়ের নাম এবং তাহার পিতার নাম এই পরিমাণ উচ্চ শব্দে বলিতে হইবে যে,সকল সাক্ষীরা যেন পরিস্কার শুনিতে পায় যদি শুধু বাপেরনাম উল্লেখ করাতে যথেষ্ট পরিচয় না হয়, সকলে পরিস্কাররূপে বুঝিতে না পারে যে, কাহার বিবাহ কাহার সহিত হইল, তবে দাদার নামও উল্লেখ করিতে হইবে।ফলকথা এই যে, নাম-ধাম এমনভাবেউল্লেখ করাআবশ্যক যাহাতে সকলেই বুঝিতে পারে যে, অমুকেরবিবাহ হইতেছে।

৫। মাসআলাঃ বিবাহ দুরুস্ত হওয়ার জন্য শর্ত এই যে, অন্ততঃ (পূর্ণ বয়স্ক সজ্ঞান মুমিন মুসলমান) পুরুষ অথবা একজন পুরুষ এবং দুইজন স্ত্রীলোকের সাক্ষাতে ঈজাব কবূলের কথা দুইটি হওয়া দরকার এবং তাহাদেরও নিজ কানে উভয়ের কথা শুনা দরকার; আর যদি মেয়ের পিতা একা একা অথবা একজন পুরুষের সামনে অথবা শুধু স্ত্রীলোকদের বা বালকদের সামনে ঈজাবের কথা বলে যে, 'আমি আমার অমূক মেয়েকে আপনার সহিত বিবাহ দিলাম' এবং অপর পক্ষ বলে যে, 'আমি কবূল করিলাম' তবে তাহাতে বিবাহ দুরুস্ত হইবে না।

৬। মাসআলাঃ যদি শুধু দশ বার জন মেয়েলোকের সাক্ষাতে ঈজাব-কবূল করে, তবে তাহাতেও বিবাহ হইবে না। ফলকথা এই যে, দুইজন মেয়েলোকের সঙ্গে একজন পুরুষ থাকাই চাই, বহু সংখ্যক মেয়েলেক হইলে তবুও তাহাদের সহিত একজন পুরূষ থাকাই চাই।

৭। মাসআলাঃ যদি দুইজন অমুসলমান পুরুষের সামনে অথবা একজন মুসলমান পুরুষ এবং অন্যান্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালকদের সামনে অথবা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান পুরূষ এবং একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান স্ত্রীলোক এবং অন্যান্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকাদের সামনে 'ঈজাব-কবুল' হয়, তবে বিবাহ দুরুস্ত হইবে না।

৮। মাসআলাঃ প্রকাশ্য সভায়, যেমন জামে' মসজিদে জুমু'আর নামাযের পর অথবা এইরূপ অন্য কোন মজলিসে বিবাহ হওয়াই অতি উত্তম, যাহাতে বিবাহের সংবাদ সকলেই অবাধে জানিতে পারে, গোপনে বিবাহ হওয়া উচিত নহে। অবশ্য একান্তই যদি কোন ঠেকা পড়ে, তবে কমের পক্ষে দুইজন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোকের অবশ্যই উপস্থিত থাকিতে হইবে যাহারা নিজ কানে বিবাহের 'ঈজাব-কবূল' কথাগুলি শুনিতে পায়।

৯। মাসআলাঃ পাত্র এবং পাত্রী উভয় যদি পূর্ণ বয়স্ক বালেগ হয়, তবে তাহারা তাহাদের 'ঈজাব-কবূল' নিজেরাই করিতে পারে। সাক্ষীদের সামনে যদি তাহাদের একজন বলে, 'আমি তোমাকে বিবাহ করিলাম' এবং অন্যজন বলে, 'আমি কবূল করিলাম' তবে তাহাতেও বিবাহ দুরুস্ত হইয়া যাইবে।

১০।মাসআলাঃ সাবালেগ পাত্র বা পাত্রী যদি নিজে 'ঈজাব-কবূল' নাকরিয়া অন্য কাহাকে বিবাহে 'ঈজাব-কবুল'এর জন্য উজীল বানাইয়া দেয় এবং উকীলসাক্ষীদের সামনে উকীল স্বরূপ 'ঈজাব-কবূল'করিয়া দেয় তাহাতেও বিবাহ দুরুস্থ হইয়াযাইবে। উকীলের 'ঈজাব-কবূল' এর পর আর মোয়াক্কেলের অস্বীকার করিবারউপায় নাই।

 

0 comments:

Post a Comment