ইসলামী আহ্কামের
অধিকাংশই নির্ধারিত হইয়াছে চাদের হিসাবে। রমযান শরীফের রোযা ফরয করা
হইয়াছে চাদের হিসাবে, যাকাত
ফরয করা হইয়াছে
চাদের হিসাবে। হজ্জ ফরয করা হইয়াছে চাদের হিসাবে, ছেলেমেয়ের বালেগ হওয়ার বয়স গণনা করা হয় চাদের হিসাবে,
মেযেলোকের ইদ্দত গণনা করা হয় চাদের হিসাবে। এইজন্য চাদের
হিসাবে বৎসর ও মাসের হিসাব রাখা আমাদের জন্য অপরিহার্য।
পক্ষান্তরে দৈনিক পাচ ওয়াক্ত নামাযের সময় নিরুপণ করা হয় সুর্যের হিসাবে। কাজেই চাদের
মাস এবং সুর্যের মাসের হিসাব রাখাই আমাদের দরকার। ঈসায়ী সনের মাসগুলির তারিখ নির্ধারিত
আছে, সহজেই হিসাব রাখিয়া
ঠিক করিতে পারে।
হিজরী সনের পিছনেই দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা বড় ত্যাগের ঐতিহাসিক পটভূমিকা রহিয়াছে।
বিশেষতঃ
অন্যান্য ধর্মগুলির যেমন ব্যক্তিগত বা আঞ্চলিক বা বংশগত নামে নামকরণ করা হইয়াছে, ইসলামে ধর্মের নামকরণের বেলায় তেমন কোন ব্যক্তিগত বংশগত বা
অঞ্চলগত নামে নামকৃত করা হয় নাই। বরং উহার সাধারণ গুণগত নামেই নামকরণ করা হইয়াছে। অনুরূপভা্বে
হিজরী সনকেও সত্যের জন্য ঘরবাড়ী, জায়গা-জমিন,
বিষয়-সম্পত্তি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব যথাসর্বস্ব ত্যাগরূপ মহৎ গুণের স্মৃতিমূলক নাম রাখা হইযাছে। কোন ব্যক্তি-বিশেষের বা মৃত্যুর সহিত সম্বন্ধ
রাখিয়া নাম রাখা হয় নাই।
হিজরী
সনের প্রথম মাস 'মুহাররাম'। এই মাসের ১০ই রাত্রিকে আশুরার রাত্রে
বলা হয়। এই দিনটির অনেক ফযীলত আছে। এই দিনে হযরত আদম আলাইহিস্সালামের তওবা কবূল হয়।
এই দিনে হযরত ইউনুস
আলাইহিস্সালামের কওমের তওবা কবূল হয়। এই দিনে হযরত নূহ্
আলাইহিস্সালামের জাহাজ মহাপ্লাবন হইতে
মু্ক্তি লাভপূর্বক জুদী পাহাড়ে আসিয়া লাগে। এই দিনে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্সালাম জন্মলাভ
করেন। এই দিনেই হযরত ঈসা আলাইহিস্সালাম আল্লাহ্র অসীম কুদরতে বাপের ঔরস
ব্যতীত মাতৃগর্ভ হইতে জন্মলাভ করেন। এই সমস্ত কারণে আশুরার রাত্রির ফযীলত অনেক
বেশী। এই দিনে
রোযা রাখিলে ও দান খয়রাত করিলে অশেষ নেকী ও ছওয়াব পাওয়া যায়। ইহা পূর্ব হইতেই প্রমাণিত
আছে।
পরে
নানার উত্তরাধিকার বা রাজত্ব অধিকারের জন্য নহে; ইসলাম ধর্মের নেতৃত্ব কতৃত্বকে ইয়াযিদ ফাসেকের হাত হইতে রক্ষা করার জন্র এবং মোসলিম
জাতিকে ও ইসলামী আদর্শ ও খেলাফত-তন্ত্রকে সর্বপ্রধান বেদাত বংশগত রাজতন্ত্র হইতে রক্ষার জন্য
আমাদের হযরতের নাতি ইমাম হোসায়েন (রাঃ)
আমরণ জেহাদ করিয়া এই দিনেই শাহাদত বরণ করেন। অতএব, এই দিনে আমাদের কর্তব্য রোযা রাখা, দান খয়রাত করা এবং আমাদের পূর্ববর্তী
পয়গম্বর ও আওলিয়াগণির
ত্যাগের এবং আদর্শ চরিত্রের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়া নিজেদের ভিতরে সেই প্রেরণা ও
দ্বীনের খেদমতের জযবাকে জাগান। এই পবিত্র দিনকে তাজিয়া ইত্যাদি উৎসবের দ্বারা বা আরও অন্যান্য গর্হিত কর্মের দ্বারা অপবিত্র করা অতীব অন্যায়।
মাসআলাঃ নবী করিম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে।
নবীজী বললেন, এটি কি? তারা বলল, এটি একটি ভাল দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের
কবল থেকে বাঁচিয়েছেন।
তাই মুসা আ. রোজা পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ বললেন, মুসাকে অনুসরণের
ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অত:পর তিনি রোজা রেখেছেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।{বোখারি:১৮৬৫}
যখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।
লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল!
এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা
বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী
বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব
ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী
বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে
গিয়েছে। {সহিহ মুসলিম:১৯১৪৬}
0 comments:
Post a Comment