আল্লাহপাক বলেছেন, লিবাছুত্তাকওয়া জালিকা খাইরু।
অর্থ: পরহেজগারী পোশাক, তাই উত্তম।
১। ছতর ঢাকা ফরজ : তাই ছতর ঢাকার জন্য যতটুকু পোশাকের প্রয়োজন ততটুকু পোশাক পরিধান করা মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য ফরজ। এই অতিরিক্ত যা পরিধান করা হয় তা ক্ষেত্র বিশেষ সুন্নাত, নফল, মুস্থাহাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ। 
২। এমন পাতলা পোশাক বা কাপড় পরিধান করা হারাম বা নাজায়েজ যাতে ছতর ঢাকে না, কাপড়ের নীচের শরীরের ঝলক দেখা যায়। যেমন মখমল, জালিদার, পাতলা কাপড় ইত্যাদি পরিধান করা। অর্থাত কাপড় পরিধান করা সত্বেও উলঙ্গ থাকার মত দেখা যায়।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, অনেক কাপড় পরিধানকারী ও পরিধানকারিনী কিয়ামতের দিন উলঙ্গ বলে সাব্যস্ত হবে। আর যদি জামা-কোর্তা এবং ওড়না সবই পাতলা হয় তবে আরও বেশি মারাত্মক।
৩। পুলুষের পোশাক : লুঙ্গি, পায়জামা, কলিদার জামা বা জুব্বা নেছফ ছাক পর্যন্ত (পায়ের নলার স্থানকে নেছফ ছাক বলা হয়) টুপি, পাগড়ী ও রুমাল সুন্নাত।
৪। মহিলাদের পোশাক : পায়জামা, কামিজ (কোর্তা) ওড়না, বোরকা, চাদর সুন্নাত। শাড়ি পরা জায়েজ।
৫। পুরুষের ছতর : নাভির উপর থেকে হাটুর নীচে পর্যন্ত ঢেকে রাখাকে ছতর বলা হয়। এ ছতর ঢাকা ফরজ। শরীয়তে ওজব ছাড়া খোলা রাখা হারাম। দেখাও হারাম। কবীরা গুনাহ। টাখনু গিরার নীচে জামা, কাপড়, লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট ইত্যাদি পরিধান করা হারাম।
৬। মহিলাদের ছতর কয়েক প্রকার। যেমন-
ক) একজন মহিলার নিকট আর একজন মহিলার ছতর পুরুষের ন্যায়। অর্থাৎ নাভির উপর হতে হাটুর নীচ প্রর্যন্ত ঢেকে রাখা।
খ) মুহরিম পুরষগণের নিকট একজন মহিলার ছতর গলা হতে হাটুর নীচে পর্যন্ত ঢেকে রাখা। তাছাড়া বাকী অংশ খোলা রাখা জায়েজ। ঢেকে রাখা উত্তম। কিন্তু পেট, রান ইত্যাদি তাদের সামনে খোলা রাখা না জায়েজ। (যাদের সাথে বিবাহ দেযা বা বসা হারাম তাদেরকে মুহরিম বলা হয়।)

গ) নামাজের মধ্যে একজন মহিলার ছতর : হাতের কজি, পায়ের পাতা, ও মুখমন্ডল ছাড়া সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরজ।
ঘ) গায়রে মুহরিম পুরুষের নিকট একজন মহিলার ছতর : চাই সেই পুরুষ পর হোক বা আপন হোক। যেমন চাচাত ভাই, মামাত ভাই, ফুফাত ভাই, খালাত ভাই, দুলা ভাই, বেয়াই ইত্যাদি বা পাড়া-প্রতিবেশী, রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে, অফিসে যেকোন পর পুরুষের নিকট মাথার তালু হতে পায়ের তালু পর্যন্ত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরজ। একটি চুলও খোলা রাখা জায়েজ নেই বরং হারাম। এমনকি মাথা আচড়াতে যে চুল উঠে আসে বা পড়ে যায় বা নখ কেটে এমন জায়গায় ফেলে রাখা জায়েজ নেই যেখানে গায়রে মুহরিম পুরুষের নজরে পড়তে পারে। এরূপ করলেও গুনাগার হবে।
ঙ) একজন ডাক্তারের নিকট একজন মহিলার ছতর : যরুরত হিসাবে যতটুকু দেখা প্রয়োজন ততটুকু দেখা যেতে পারে। তার চেয়ে বেশী দেখা বা দেখান অথবা যার দেখার প্রয়োজন নেই তাকে দেখান জায়েজ নেই। যেমন মনে করুন কোন মহিলার রানে ফোড়া হয়েছে, এখন ডাক্তারকে দেখান প্রয়োজন। তবে ফোড়ার অংশটুকু দেখানো যাবে। বেশী দেখাবেন না। দেখাবার নিয়ম এই যে, পুরাতন কাপড় দ্বারা সমস্ত শরীর ঢেকে শুধু ফোড়ার জায়গাটুকুতে কাপড় ছিড়ে বা কেটে দিবে। ডাক্তার ফোড়ার জায়গাটুকু দেখবে, বেশী অংশ দেখবে না ও দেখাবে না। এমনকি ডাক্তার ছাড়া অন্য কোন পুরুষ বা মহিলাকেও দেখাবে না। কারণ জায়েজ নেই।
* যবতী মহিলাদের জন্য গায়ের মুহরিম পুরুষের সামনে নিজের চেহারা, হাতের বাজু, কোমর খোলা অবস্তায় আসা, তাদেরকে দেখান জায়েজ নেই। তদ্রুপ নিজের হাত, পা ইত্যাদি দ্বারা তাদেরকে স্পর্শ করাও জায়েজ নেই। (এমনকি দেবর, ভগ্নিপতি বা চাচাত, মামাত, ফুফাত, ভাইদেরকেও দেখা দেওয়া বা স্পর্শ করা এবং পীর ওস্তাদের কদমবুচি করা বা দেখা দেওয়া হারাম।
* যুবতী মহিলাদের জন্য গায়রে মুহরিম পুরুষের সামনে নিজের চেহারা বা শরীরের কোন অংশ দেখান যেমন জায়েজ নেই যেখানে পর পুরূষগণ দেখতে পায় এমন জায়গায় গায়রে মুহরিম পুরুষ আত্মীয়-স্বজনকে নতুন বৌ দেখার যে প্রচলন রয়েছে তাও সম্পূর্ণ হারাম এবং ভারী গুনাহ।
চ) সন্তান প্রসবের সময় একজন মহিলার ছতর : ধাত্রীর জন্য সন্তান ধরার জন্য যতটুকু সতর খোলা বা দেখা প্রয়োজন ততটুকু খোলা বা দেখা জায়েজ আছে। অতিরিক্ত খোলা বা দেখা জায়েজ নেই। যদি প্রসূতির পেট মলবার প্রয়োজন হয়, তবে নাভির নিচের অংশ খোলা জায়েজ নেই, কাপড়ের উপর দিয়ে পেট মলবে। মূর্খ মহিলারা প্রসূতিকে উলঙ্গ করে লয়, ধাত্রী মা, বোন, খালা, ফুফু, দাদী, নানী, চাচী, মামী, ননদ ইত্যাদি সকল মহিলারাই দেখে তা বড়ই গর্হিত কাজ, হারাম, নাজায়েজ কাজ। রাসূলুল্লাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন : সতর যে দেখবে ও দেখাবে উভয়েই আল্লাহর লানত পড়বে। সকলেরই সতর্ক থাকা উচিত।
ছ) বৃদ্ধা মহিলাদের সতর : হাতের পাতা ও পায়ের পাতা ছাড়া বাকি সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরজ।
জ) কোন যুবতী মহিলা গায়রে মুহরিম বৃদ্ধ পুরূষের সম্মুখে আসতে হলে, হাতের পাতা, পায়ের পাতা ও মুখমন্ডল খোলা অবস্থায় আসতে পারবে। কিন্তু এ ছাড়া মাথার চুল শরীরের অন্য কোন অংশ খোলা রাখতে পারবে না। না-জায়েজ ও গুনাহ হবে।
* প্রত্যেক গায়রে মুহরিম পুরুষ বা মহিলার যে পরিমাণ পর্দা করা ফরজ, কাফের, মুশরিক মহিলা হতে সে পরিমাণ পর্দা করা ওয়াজিব।
* যাকে দেখা দেওয়া জায়েজ নেই, তাকে স্পর্শ করাও জায়েজ নেই। এমনকি শরীরের যে অংশ দেখা জায়েজ নেই তা স্পর্শ করাও জায়েজ নেই। যেমন গোসলের সময় নাভির নিচের অংশ রান ইত্যাদি পরিস্থারের প্রয়োজন হয় তবে কাপড় খুলে খালি হাতে করা জায়েজ নেই। তাতে কাপড় ইত্যাদি পেচায়ে বা কাপড়ের উপর দিয়ে মলে-ঘসে পরিস্কার করবে।
* পুরুষের জন্য রেশমের জামা, কাপড়, পাগড়ী-টুপি, রুমাল ইত্যাদি পরা জায়েজ নেই। সোনা-রুপার তাবিজ গলায় দেয়া, হাসুলী, খাড়ু, বালা ইত্যাদি জেওর গলায় দেওয়া বা জাফরান ও কুসুম ফুলের রঙ্গিন কাজড় পরিধান করা না-জায়েজ। এমনকি মুসলিম ছোট ছেলেদের জন্যও নাজায়েজ। সার কথা এই যে, পুরুষের জন্য যা নাজায়েজ, ছেলেদের জন্যও তা নাজায়েজ।
* পুরুষের জন্য তিনপ্রকার চুল রাখা সুন্নাত। ১) কান প্রর্যন্ত, ২) কাধ প্রর্যন্ত, ৩) সমস্ত চুল কামায়ে ফেলাও সুন্নাত। কিন্তু আগে-পাছে সমানভাবে খাট করে চুল রাখা জায়েজ আছে। পাছে একেবারে ছোট বা সামনে বড় বা জুটির মত রাখা জায়েজ নেই। স্ত্রীলোকের সুরত ধরা, লম্বা চুল রাখা, অনুরুপ জুতা, কাপড় জেওর ইত্যাদি পরা জায়েজ নেই।
* মহিলাদের সম্পূর্ণ চুল লম্বা রাখতে হবে। ছোট করে বাবরীর মত করে রাখা জায়েজ নেই। বেণী করে বা খোলা করে রাখতে পারে। মহিলাদের জন্য পুরুষের সুরত ধরা, পুরুষের মত জামা-কাপড়, জুতা সার্ট, প্যান্ট ইত্যাদি পরিধান করা জায়েজ নেই। রাসূলুল্লাহ সালালাহু আলইহি ওয়াসালাম বলেছেন, যে সকল মহিলা পুরুষের ন্যায় সুরত বানায় তাদের উপর আল্লাহপাকের লা'নত পড়বে। মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কাফির, মুশরিকদের সুরত ধরা, লেবাস-পোশাক, খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা, আচার-ব্যবহার ইত্যাদিতে তাদের অনুকরণ-অনুসরণ করা জায়েজ নেই।
* মহিলাদের জন্য হরেক রকমের অলংকার পরিধান করা জায়েজ আছে। কিন্তু বেশি অলংকার না পরা উত্তম। কেননা যারা দুনিয়াতে অলংকার পরবে না, তারা জানানতে অনেক বেশি অলংকার পরে। যে অলংকারে শব্দ হয় তা পরা জায়েজ নেই। এমনকি ছোট মেয়েদের জন্যও পরা জায়েজ নেই।
* স্বামীর সাতে স্ত্রীর এবং স্ত্রীর সাথে স্বামীর কোন পর্দা নেই। স্বামী-স্ত্রীর সর্বাঙ্গ দেখতে পারবে ও স্পর্শ করতে পারবে। কিন্তু বিনা জরুরতে এরুপ না করা ভাল।
*স্ত্রীলোকের জন্য পালক ছেলে বয়স্ক হলে তাকে, ধর্ম ভাই, ধর্ম বাপ, উকিল বাপ, উকিল ভাই, মামা শ্বশুর, খালু শ্বমুর, চাচা শ্বশুর, ভাসুর ও অন্যান্য গায়রে মুহরিম পুরুষকে দেখা দেওয়া জায়েজ নেই। এমনকি হিজড়া, খোজা বা অন্ধের সামনেও আসা জায়েজ নেই।
সুত্র: বেহেশতী জেওর

1 comments:

  1. কেনো মহিলা ডাক্তার নাই নাকি যে পুরুষ ডাক্তারের কাছে মহিলার রানের ফোড়া দেখাতে হবে ? এটা হারাম কেননা মহিলা ডাক্তার আছে ।
    .
    মহিলাদের মহিলা ডাক্তারের কাছেই যেতে হবে

    ReplyDelete